বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:ফের বিস্ফোরক বিজেপির রাজ্য সভাপতি। এবার তাঁর অভিযোগ ত্রাণের ত্রিপল কেনা নিয়ে। তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন, রাজ্যে আমফান ঘূর্ণিঝড়ের পর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্যে এসে ১০০০ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করে যান। তার দু’দিনের মধ্যেই সেই টাকা কেন্দ্র রাজ্যকে দিয়ে দিয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘সেই টাকা কাদের কী খাতে দেওয়া হয়েছে, সেই তথ্য কোথায়? বিডিও অফিসেও কোনও তালিকা লাগানো হয়নি।’
আমফানের পরই ত্রাণ এবং ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বঞ্চিত ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিরোধী দলগুলিও বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে। রাজ্য সরকার এই অভিযোগ নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে। দুর্নীতিতে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার অবশ্য দিলীপ ঘোষ পাল্টা অভিযোগ করেছেন, ‘দুর্নীতিগ্রস্তরা সবাই শাসক দলের। এই দুর্নীতিগ্রস্তের বিরুদ্ধে এফআইআর করা উচিত ছিল। কিন্তু তাদের কারও বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শুধু শোকজ করা হয়েছে। এর অর্থ কী? এ–সব তো লোক–দেখানো!’ এখানেই থেমে যাননি তিনি। এদিন রীতিমতো সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, ‘২০১৩ থেকে ২০১৬, এই তিন আর্থিক বছরে ঝড়ের জন্য ত্রিপল কেনায় ১৮ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে।’
শাসক দল ও দুর্নীতি এখন সমার্থক হয়ে গিয়েছে বলেও তিনি এদিন জানান। তাঁর অভিযোগ, ‘রাজ্য সরকার বা শাসক দল বোঝানোর চেষ্টা করছে, কিছু লোক দুর্নীতি করছে। বাকিরা সকলেই ঠিক আছেন। কিন্তু এটা ডাহা মিথ্যে কথা। ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে নন্দীগ্রামে দুর্নীতি হয়েছে। নামখানায় যারা টাকা নিয়েছিল, তারা ২০ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়ে গিয়েছে। যে দুর্নীতিগুলি চারদিকে হচ্ছে, সব ব্যাপারই শাসক দল, সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীর জানা। কারা দুর্নীতিতে যুক্ত, টাকা কোথায় যাচ্ছে, সবই সকলে জানেন। শুধু লোক–দেখানো প্রহসন চলছে এখন।’ উল্লেখ্য, এরই মধ্যে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এই আন্দোলন সম্পর্কেও কটাক্ষ করে দিলীপবাবু বলেন, ‘তৃণমূল আর আন্দোলন! গ্রামের মানুষের বাড়িগুলিতে শাসক দলের নেতা ও মন্ত্রীরা আগে যান, তার পর বুঝবেন আন্দোলন কাকে বলে! বুঝবেন কত ধানে কত চাল! মানুষ কতখানি রেগে আছে, বুঝতে পারবেন তাঁরা।’
যদিও দিলীপ ঘোষের এমন অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শাসক দলের তরফে। তাঁর অভিযোগের জবাব দিতে রাজি হননি শাসক দলের কোনও নেতাই। ফিরহাদ হাকিম বা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকরা তাঁর কথাকে ‘গুরুত্বহীন অভিযোগ’ বলে উল্লেখ করেছেন। জানিয়েছেন, সারা বছর মা, মাটি, মানুষের জন্য কাজ করে সরকার ও শাসক দল। তাই কে কী বলল, তাকে গুরুত্ব দেওয়া অর্থহীন বলে তাঁরা মনে করেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের জন্য তৃণমূল নেতাদের এখন অনেক কাজ রয়েছে। এভাবে দিলীপ ঘোষের মতো নেতাদের অভিযোগের উত্তর দিয়ে নষ্ট করার মতো সময় কারও হাতে নেই বলে কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন।